মংলা প্রতিনিধি : মংলা বন্দরের পশুর নদীতে ডুবে যাওয়া লাইটারেজ জাহাজে থাকা তেল ও কয়লার তেজস্ক্রিয়া ছড়ানোর আশঙ্কা করছে বনবিভাগ। এতে ম্যানগ্রোভ বনের জলজ ও বনজ প্রাণির সম্ভাব্য এক কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করে গতকাল বুধবার বিকেলে থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ লাইটারের মাস্টারকে আটক করেছে। এদিকে জাহাজটি মূল চ্যানেলের বাইরে ডুবে যাওয়ায় বন্দর চ্যানেল সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে জাহাজ উদ্ধারে বা দুর্ঘটনাকবলিত স্থান চিহ্নিত করতে এখন পর্যন্ত কোন ধরনের কার্যক্রম শুরু করেনি। এ ব্যাপারে তিন সদস্যের তদন্ত কমটি গঠন করা হয়েছে। সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা এসিএফ সাহাবুদ্দিন জানান, দুঘটনাস্থল থকে সুন্দরবন বেশ নিকটে। যার দূরত্ব দেড় থেকে দু’হাজার ফুট। এ কারনে দুর্ঘটনার পর পরই জাহাজে থাকা তেল ও কয়লার তেজস্ক্রিয়া ছড়ানোর আশঙ্কায় ঘটনাস্থলে তদারকির কাজ করছে বনবিভাগ। পাশাপাশি ওই এলাকায় পুলিশ কোস্টগার্ড ও স্থানীয় বাসিন্দারাও নজরদারি করছে। রেঞ্জ কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করছে বন বিভাগ। মংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ লুৎফর রহমান জানান, ঘটনার রাতেই আটক হয়েছে জাহাজারে মাস্টার বুলু কাজী (৪৫)। এ ঘটনায় চাঁদপাই ফরেস্ট রেঞ্জার গাজী মতিউর রহমান বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় কার্গো জাহাজের মালিক দিল খান ও মাস্টার মোঃ ভুলু গাজীকে আসামি করা হয়েছে। বনবিভাগের দায়ের করা মামলায় বনের জলজ ও বনজ প্রাণির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছে। এদিকে ডুবে যাওয়া লাইটারেজ ড্রাইভার মোঃ ওবায়দুল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বহিঃনোঙ্গরের হারবাড়িয়া ৩নং বয়া এলাকায় গত মঙ্গলবার বিকেল তিনটায় লাইটারেজটি ডুবো চরে আটকে কাত হয়ে তলা ফেঁটে যায়। এতে একটি হ্যাজে পানি উঠতে থাকলে লাইটারেজ রেডিও বার্তায় বিভিন্ন সংস্থার কাছে সাহায্য চাওয়া হয়। কিন্তু কেউ তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানিকৃত কয়লা বোঝাই এ জাহাজটি যশোরের নওয়াপাড়ার শেখ ব্রাদার্সের ঘাটে যাওয়ার কথা ছিল। এতে শেখ ব্রাদার্সের প্রায় ৫০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি তাদের। বর্তমানে জাহাজটির পিছনের অংশ কিছুটা দেখা গেলেও বাকি অংশ পানিতে পুরোপুরি তলিয়ে রয়েছে। জাহাজটি মূল চ্যানেলের বাইরে নিমজ্জিত থাকায় এই চ্যানেল দিয়ে জাহাজ ও নৌযান চলাচল সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে। তবে প্রচণ্ড স্রোতের টানে এটি নদীর ভেতরের দিকে গেলে ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। জাহাজ উদ্ধারে বা দুর্ঘটনাকবলিত স্থান চিহ্নিত করতে এখন পর্যন্ত কোন ধরনের কার্যক্রম শুরু করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কয়লাবাহী কার্গো দুর্ঘটনার ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন বলেন, কয়লায় কার্বন রয়েছে। বিষাক্ত কয়লায় জলজ প্রাণি ও সুন্দরবন এবং পশুর নদীর প্রাণিবৈচিত্র-জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে কয়লাবাহী কার্গোডুবির ঘটনায় সুন্দরবন এবং পশুর নদী রক্ষার দাবিতে পশুর নদীর পাড়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ওয়াটারকিপার এ্যালায়েন্স, পশুর রিভারকিপার ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে। মানববন্ধন চলাকালে সমাবেশে বক্তব্য দেন বাপার মংলার সমন্বয়কারী পশুর রিভারকিপার সাংবাদিক মোঃ নূর আলম শেখ, পরিবেশকর্মী দিপু মৃধা, তানজীম হোসেন মুকুল প্রমুখ। এ প্রসঙ্গে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার মোঃ হাসান জানান, ডুবে যাওয়া লাইটারেজ মালিক পক্ষকে যত দ্রুত সম্ভব উদ্ধার কাজ শুরু করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, উদ্ধার কাজে সহযোগিতা চাওয়া হলে কর্তৃপক্ষ সকল প্রকার সহায়তা করবে। উল্লেখ্য বন্দরের পশুর চ্যানেলের হাড়বাড়িয়ার ৩ নম্বরে অবস্থানরত বিদেশী জাহাজ এম,ভি গ্লোবস্টোন থেকে প্রায় ৫শ’ ১০ মেঃ টন কয়লা বোঝাই করে যশোরের নওয়াপাড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয় কার্গো জাহাজ এম,ভি জিয়া রাজ। জাহাজটি গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে পশুর চ্যানেলের জয়মনি এলাকায় নিমজ্জিত হয়।