চন্দন কুমার আচার্য সিরাজগঞ্জঃ বর্ষারানী সিংহাসন ছাড়তে নারাজ হলেও ঋতুর সিংহাসনটা এখন শরতেরই। শুরুর দিকে শারদীয় মেঘ হটিয়ে বর্ষার রাজত্ব চলছে বটে, তবে ভাদ্র-আশ্বিন এ দু’মাস নীল আকাশ, নদীর পাড় আর বাতাসের সুগন্ধে ছড়িয়ে যাবে শরৎ ঋতু। সিরাজগঞ্জের যমুনার এপাড় ওপাড়ে দেখা যাবে কাঁশবন। দেখতে কতই না সুন্দর থেকে সুন্দর। উত্তরের হাওয়ায় পাকা কাঁশবনে উড়বে কাঁশফুল।
শরতের আগমন সম্পর্কে কবি বলেছেন-
‘আজি শরৎ তপনে প্রভাত স্বপনে কী জানি পরান কী যে চায়
ওই শেফালির শাখে কী বলিয়া ডাকে বিহগ বিহগী কী যে গায় গো
আজি মধুর বাতাসে হৃদয় উদাসে, রহে না আবাসে মন হায়
কোন কুসুমের আশে কোন ফুলবাসে সুনীল আকাশে মন ধায় গো।’
ছয় ঋতু দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। বিশ্বের সকল দেশেই ছয়টি ঋতুর আগমন কখন ঘটে না। বাংলাদেশে ছয়টি ঋতু আগমন ও প্রতি ঋতুরই রয়েছে আলাদা পরিচায়ক। আর ঋতুর পার্থক্য ফুটে ওঠে ফুলে। শরতে সাদা কাশফুল আর শিউলির আধিপত্য ছাড়াও ফোটে আরও অনেক সহচরী ফুল। শরৎকালে ঝকঝকে নীল আকাশ। যমুনা নদীর পাড়ে সারি সারি সাদা কাঁশবন ও কাশফুল। মৃদু বাতাস দোলা দিচ্ছে তাদের নরম পাপড়িতে। এই তো চিরচেনা শরত। কাশফুল শিশিরভেজা সবুজ ঘাসের বিছানায় রাশি রাশি শিউলি ফুল। যেন খসে পড়েছে রাতের ঝলমলে তারা। মাটিতে মিশে গেছে তার গন্ধ। ছোট ছেলেমেয়েরা দল বেঁধে নামে শিউলি ফুল কুড়োতে। আর পাল্লা দিয়ে চলে মালা গাঁথার প্রতিযোগিতা। জাফরানি বোঁটার দুধসাদা ছয় পাপড়ির এ ফুল রাতে ফোটে ও সকালে ঝরে পড়ে। বেলি ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করে রাতির আকাশ। বেলি ফুলের ঘ্রান আর পাপড়ি সাজানো বেলি। বেলি ফুল বর্ষার ফুল হলেও ফোটে শরতে। বর্ষার ফুল দোলনচাঁপা শরতেও ছড়ায় তার সুবাস। শরতের সন্ধ্যায় দোলনচাঁপার সাদা পাপড়ি যেন আওড়ায় প্রিয় কোনো প্রেম কাব্য। দোলনচাঁপা কয়েকটি প্রজাতির ফুল। এ ছাড়াও জবা ফুল, পদ্মফুল, ফোঠে। পদ্মফুলের লাল ও সাদার আভা দেখতে কতই না সুন্দর। শুধু দেখতে ইচ্ছে করে পদ্ম ফুলকে। পাপড়ির ছড়া বহু গুচ্ছময়। হিন্দু ধর্মলম্বীদের শারদীয় দুর্গা পূজায় পদ্ম ফুল লাগে। পদ্ম ফুলে নীল আভা দেখা যায়। ধর্মীয় দৃষ্টিতে ইহার নাম নীলাভ আভার নাম নয়ন অর্থাৎ চক্ষু। তাই ১০৮টি নীল পদ্ম দ্বারা রামচন্দ্র অকালবোধন করছিল শরৎ কালে শারদীয় দূর্গাপূজা।