নীলফামারী প্রতিনিধি : সৈয়দপুরে এক পাষন্ড স্বামী তার স্ত্রী গোলাপীকে (১৯) ধারালো ছুরি দিয়ে হত্যা করেছে। পাষন্ড স্বামী আহসান হাবিব ওরফে তুফান শ্বশুরের কাছে যৌতুকের ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। যৌতুকের ওই টাকা না পেয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে স্ত্রীকে নিয়ে আসার পথে বাড়ির অদূরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বুকে আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করে। গত বুধবার রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার ২ নম্বর কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের হাজারীহাট-চওড়াবাজার সড়কের তেলিপাড়া সংলগ্ন তিস্তা শাখা ক্যানেলের পাশে এ ঘটনাটি ঘটে। ঘাতক স্বামী তুফানকে আটক করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করে হত্যার কাজে ব্যবহৃত ধারালো ছুরিটি উদ্ধার করে দিয়েছে পুলিশকে ঘাতক।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নিহত গৃহবধূর বাবা ও বোনসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্য সৈয়দপুর থানায় এসে তার লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় সেখানে উপস্থিত অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
জানা গেছে, নীলফামারী সদর উপজেলার চাপড়া সরঞ্জমজানী ইউনিয়নের পূর্ব চাপড়া ক্যাশিয়ারটারীর (ঘোপাটারী) নূর ইসলাম ওরফে তন্ডুলের ছেলে আহসান হাবিব ওরফে তুফান (২২)। আর গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা সদর ইউনিয়নের বৈরী হরিণমারী গ্রামের রিক্সাভান চালক চাঁন মিঞার মেয়ে গোলাপী (১৯)। তারা উভয়েই ঢাকায় একটি গার্মেন্টস্ কারখানায় কাজ করত। প্রায় এক বছর আগে তারা ভালোবেসে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকে তুফান শ্বশুরবাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা যৌতুক আনার জন্য চাপ দিয়ে আসছিল।
নিহত গৃহবধূর বাবা চাঁন মিয়া অভিযোগ করে বলেন, মেয়ের বিয়ের পর থেকে জামাতা আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করে আসছিল। জামাই শেষ অবধি ১০ হাজার টাকা যৌতুক চেয়ে বসে আমার কাছে।
আমি গরিব মানুষ। রিক্সা-ভ্যান চালিয়ে কোন রকমে সংসার চলে আমার। জামাইয়ের দাবিকৃত যৌতুকের ওই টাকা কোথা থেকে দিব?
তিনি বলেন, গত কয়েক দিন আগে মেয়ে জামাই আমার বাড়িতে আসে। গত বুধবার মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে আর তার সুখের কথা চিন্তা করে আমি রিক্সা-ভ্যানটি ২ হাজার টাকায় বিক্রি করে ওই টাকা জামাইয়ের হাতে তুলে দেই। কিন্তু জামাই ওই সামান্য টাকা দেখে রাগ করে মেয়েকে নিয়ে সকাল ১০টায় আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। এরপর দুপুরে একবার জামাইয়ের মোবাইল ফোনে কল দিলে তারা জানায়, আমরা রংপুরের মিঠাপুকুরে পেঁৗছেছি। এরপর রাত ১১টার দিকে খবর পাই আমার মেয়ের এক্সিডেন্টে মারা গেছে।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল পৌনে ১০টায় তিনি সৈয়দপুর থানায় এসে মেয়ের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় তিনি পুলিশের উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের অভিযোগ করেন জামাতায় যৌতুকের জন্য তার মেয়েকে মেরে ফেলেছে। তিনি মেয়ের হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইসমাইল হোসেন জানান, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মোবাইল ফোন পেয়ে রাতে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে প্রথমে গৃহবধূর স্বামীকে দেখেই তাদের সন্দেহ হয়। পরে তাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরবর্তীতে বিকালে তাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে হত্যার কাজে ব্যবহৃত ধারালো ছুরিটি উদ্ধার করা হয়েছে।
সৈয়দপুর সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) এ এন এম সাজেদুর রহমান জানান, ঘাতক স্বামী তুফান পুলিশের কাছে তার স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সৈয়দপুরে যৌতুক না পেয়ে স্ত্রী খুন : স্বামী আটক
Spread the love
Spread the love